মৌলভীবাজারকুলাউড়াবড়লেখা

কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ প্রকল্পে ভারতীয় ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করছে রেলওয়ে

নিউজ ডেস্কঃ  দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা মৌলভীবাজারের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সেকশনটি পুনর্বাসনের কাজ দেয়া হয় ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘কালিন্দি রেল নির্মাণ’কে। রেলওয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ২০১৭ সালের নভেম্বরে চুক্তি করে। চুক্তির চার বছর পার হলেও প্রতিষ্ঠানটি কাজ করেছে মোটে সিকি ভাগ। এর মধ্যে শেষ দুই বছরে কোনো কাজই করেনি প্রতিষ্ঠানটি। বারবার তাগাদা দিয়েও কালিন্দিকে কাজে সম্পৃক্ত করতে পারছে না রেলওয়ে। এমন অবস্থায় কালিন্দির সঙ্গে করা চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলওয়ের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও প্রকল্পের অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়াও।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালিন্দির সঙ্গে চুক্তি বাতিলের বিষয়টি চূড়ান্ত করার জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়, ইআরডি ও ভারতীয় দূতাবাসের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সভা আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

রেলপথটি পুনর্বাসনের জন্য কালিন্দির সঙ্গে করা বাংলাদেশ রেলওয়ের চুক্তিমূল্য ৫৪৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এ টাকায় সাড়ে ৫২ কিলোমিটার ডুয়াল গেজ রেললাইন, স্টেশন ভবন ও প্লাটফর্ম নির্মাণ, রেল সেতু নির্মাণ এবং নন-ইন্টারলকড কালার লাইট সিগন্যাল ব্যবস্থা স্থাপন করে দেয়ার কথা প্রতিষ্ঠানটির।

রেলওয়ে ২০১৮ সালের ৭ মে থেকে কালিন্দিকে কাজ শুরুর নির্দেশ দেয়। শুরুর পর থেকেই ঢিমেতালে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রকল্প এলাকায় প্রয়োজনীয় জনবল ও নির্মাণ উপকরণও এখন পর্যন্ত আনতে পারেনি তারা। পুরো রেলপথটির জন্য প্রয়োজন প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার ঘনফুট পাথর। কিন্তু এখন পর্যন্ত কালিন্দি পাথর সরবরাহ করেছে প্রায় ছয় হাজার ঘনফুট। অন্যদিকে ১০ হাজার ৭৮৯ টন রেলের মধ্যে কালিন্দি প্রকল্পে সরবরাহ করেছে ২ হাজার ২৪২ টন রেল। ২০২০ সালে করোনা মহামারী শুরুর পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্পের কাজ বন্ধ রেখেছে।

করোনা মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে কালিন্দিকে নতুন কর্মপরিকল্পনা দাখিল করার জন্য একাধিকবার অবহিত করেছে রেলওয়ে, যা প্রতিষ্ঠানটি এখনো দাখিল করতে পারেনি। দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ রাখা এবং নির্মাণকাজের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হওয়ায় চুক্তি কেন বাতিল করা হবে না, তার ব্যাখ্যা চেয়ে একাধিকবার নোটিসও দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

সর্বশেষ গত বছরের ৭ ডিসেম্বর এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে একটি বহুপক্ষীয় সভায় প্রতিষ্ঠানটিকে পাঁচটি পয়েন্টে ৩০ দিনের মধ্যে কাজ শুরুর নির্দেশনা দেয়া হয়। পয়েন্টগুলো হলো ২২৬ নম্বর গার্ডার ব্রিজ, ২২ থেকে ২৮ নম্বর পর্যন্ত বক্স কালভার্ট, দক্ষিণবাগ স্টেশন ভবন, পাঁচটি বড় সেতুর উপকাঠামো খুলে ফেলা এবং দক্ষিণবাগ স্টেশন এলাকার ‘ক্লিয়ারিং’ কাজ শুরু করা। তবে এ সময়েও কাজ শুরু করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালিন্দি রেল।

বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দফায় দফায় কাজ শুরুর জন্য কালিন্দি রেল নির্মাণকে নির্দেশনা দেয়া হলেও প্রতিষ্ঠান তা আমলে নিচ্ছে না। এমন পরিপ্রেক্ষিতে তাদের সঙ্গে করা নির্মাণ চুক্তি বাতিলের বিষয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে, ইআরডি এবং এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়া একমত পোষণ করেছে। সর্বশেষ ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন’ প্রকল্পের প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য একটি ত্রিপক্ষীয় সভায় আহ্বানের কথা বলা হয়।

২০১৭ সালের নভেম্বর করা চুক্তিপত্র অনুযায়ী, দুটি ধারায় কালিন্দির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর মধ্যে জিসিসি ৯৫ দশমিক ১ (বি) অনুযায়ী, ত্রুটি বা অক্ষমতার জন্য প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে রেলওয়ে। একইভাবে চুক্তিপত্রের জিসিসি ৯৫ দশমিক ২ অনুযায়ী অসচ্ছলতা বা দেউলিয়াত্বের জন্য কালিন্দির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। রেলওয়ের কর্মকর্তারা বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন, চুক্তি বাতিলের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়াগুলো এরই মধ্যে তারা শুরু করে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বণিক বার্তাকে বলেন, ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে চুক্তি অনুযায়ী এবং আইন অনুযায়ী আমরা যেসব ব্যবস্থা নিতে পারি, তার সবই নেয়া হবে। পাশাপাশি প্রকল্পটি যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করে ফেলা যায় সে বিষয়টিও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।

প্রসঙ্গত, কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয় ২০১১ সালে। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১৭ কোটি টাকা। তবে সময়মতো কাজ শুরু করতে না পারা এবং বাস্তবায়ন বিলম্বিত হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় এরই মধ্যে বেড়ে ৬৭৮ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করার প্রক্রিয়াটি বেশ সময়সাপেক্ষ। ফলে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাল ও নির্মাণব্যয় দুই-ই বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সুত্রঃ বনিক বার্তা 

Back to top button