বিয়ানীবাজার সংবাদ

কৃষিতে আগ্রহ হারাচ্ছে বিয়ানীবাজারের যুবকরা

মহসিন রনি,বিয়ানীবাজার ঃ এক সময় কৃষি নির্ভর ছিল বিয়ানীবাজার উপজেলা তবে সময়ের পরিক্রমায় সিলেটের মধ্যে প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলা গুলোর তালিকায় এখন অনেকটাই সবার উপরে এই উপজেলাটি। জিসি দেব সহ অসংখ্য গুনি ব্যাক্তির এই জন্ম ভুমিতে এখন বিলুপ্তির পথে কৃষি। আগের তুলনায় এখন দিন দিন কৃষিতে আগ্রহ হারাচ্ছে এই অঞ্চলের যুবকরা। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কিছু সংখ্যক যুবক এই পেশার সাথে জড়িত থাকলেও পৌর শহরে সেই সংখ্যা মাত্র হাতেগোনা। সময়ের পরিক্রমায় এখন তরুন ও যুবকরা ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোর দিকে অগ্রসর হচ্ছেন যার ফলে কৃষি থেকে আগ্রহ হারাচ্ছেন সিংহভাগ যুবক। বিয়ানীবাজার কৃষি বাতায়নের তথ্য মতে পুরো উপজেলা জুড়ে ৯৫১৯ জন কৃষক ও কৃষাণী বর্তমানে কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন যাদের মধ্যে মহিলা ৭৪৫ জন ও পুরুষ ৮৭৭৪ জন। তবে বেশিরভাগ কৃষক কৃষাণী সুযোগ সুবিধা ও জমির অভাবে কৃষি কাজ থেকে সরে দাড়াচ্ছেন।

সরেজমিনে বিয়ানীবাজার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায় আজ থেকে এক যুগ আগে যেখানে কৃষি জমি গুলো ধান সহ বিভিন্ন ফসলে মুখরিত ছিলো সেগুলো অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। বিশেষ করে উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী মুড়িয়া হাওরে এক সময় চাষাবাদ নিয়ে প্রতিযোগিতায় মেতে উঠতেন কৃষকরা কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় হাতেগোনা ফসলি জমি ছাড়া চারিদিকে শুধু হাহাকার। তবে আবহাওয়ার প্রতিকূলতা বৃষ্টিতে ফসলি জমিতে বন্য হওয়ার ফলে বেশিরভাগ কৃষকই আগ্রহ হারাচ্ছেন।

তবে এর ব্যতিক্রম ও আছেন অনেকেই প্রবাস জীবন বাদ দিয়ে বেছে নিয়েছেন খামার কিংবা কৃষি কাজ। তাদের মধ্যে একজন বিয়ানীবাজার পৌর শহরে নিদনপুর গ্রামের আবু তালিব। দৈনিক উত্তরপূর্বকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমাদের দেশের বেশিরভাগ তরুণই মাধ্যমিক পাশের পর বিদেশ চলে যায়। আমি চিন্তা করলাম দেশে আমি এই সময়টা কাজে লাগিয়ে কিছু টাকা খরচ করে যদি খামারে সময় দেই তাহলে ভালো একটা ফলাফল পাবো,এই চিন্তাধারা থেকেই আমার খামার করা।

বিয়ানীবাজার উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল খালিক বলেন, এক সময় আমাদের মুড়িয়া হাওরে সবাই চাষাবাদ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকতো কিন্তু বর্তমানে আগের প্রতিযোগিতা নেই। অনেক ফসলি জমি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে, এভাবে চলতে থাকলে এ উপজেলা থেকে এক সময় কৃষি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।

এ বিষয়ে সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সহ সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক সাত্তার আজাদ বলেন, প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলা হওয়াতে মানুষ এখন অনেকটাই অলস হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়াও ঐতিহ্যবাহী মুড়িয়া হাওর সহ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বন্যায় ফসলি জমিতে প্রভাব পরে যার ফলে কৃষকরা একাধিকবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কৃষি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। সরকার সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে হাওর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সহ কৃষকদের উৎসাহ প্রদান করলে বিয়ানীবাজার উপজেলায় আবার কৃষিতে সুদিন ফিরবে বলে বিশ্বাস করি।

বিয়ানীবাজার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাহমিনা খাতুন বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি এ উপজেলায়। সরেজমিনে মাঠে গিয়ে কৃষকদের উৎসাহ প্রদান সহ বিজ বিতরণ চলমান রয়েছে। চেষ্টা করছি সকলকে এ বিষয়ে উৎসাহ দেয়ার।

Back to top button