হাকালুকি পাড়ের ‘পাখিবাড়ির’ প্রবেশ রাস্তা নির্মাণে বাধা
আব্দুর রব- হাকালুকি হাওরপাড়ের হাল্লা গ্রামের মৃত মনোহর আলী মাস্টারের বাড়িটি বছরজুড়ে অতিথি ও দেশি পাখির কলতানে মুখর থাকে। পাখির বিষ্ঠায় নষ্ট হচ্ছে ঘরের টিন। সৃষ্টি হয় দুর্গন্ধময় পরিবেশের। দু’বছর পর পর পরিবর্তন করতে হয় ঘরের টিন। তারপরও পরম মমতায় আর্থিক ক্ষতির চিন্তা না করে পাখিদের সঙ্গে বসবাস বাড়ির মানুষের।
পাখির প্রতি তাদের ভালোবাসা চলছে প্রায় ৪ যুগ ধরে। বছরজুড়ে পাখির উপস্থিতির কারণে বাড়িটি জাতীয়ভাবে ‘পাখিবাড়ি’ নামে পরিচিত। পর্যটকের সুবিধার্থে স্থানীয় প্রশাসন পাখির অভয়াশ্রম লেখা সাইনবোর্ড টানিয়ে রেখেছে।
পাখির প্রতি ভালোবাসার কারণে বাড়ির মালিক পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়ির মালিকের হাতে তুলে দিয়েছেন পুরস্কার। কিন্তু প্রভাবশালী প্রতিবেশির বাধায় জমি কিনেও পাখিবাড়িতে সরাসারি প্রবেশের রাস্তা নির্মাণ করতে পারছেন না বাড়ির মালিক মৃত মনোহর আলী মাস্টারের ছেলেরা।
বড়লেখা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে তালিমপুর ইউপির হাল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ‘পাখিবাড়ি’তে উপজেলার অন্যান্য পর্যটন স্পটের মতো বছরজুড়ে ভ্রমণ পিপাসু ও পাখি প্রেমীরা ভিড় জমান। স্থানীয় লোকজন জানান, শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে প্রতি বছর দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে যখন ঝাঁকে ঝাঁকে আসে অতিথি পাখির দল, তখন হাকালুকি হাওরের পাশাপাশি হাল্লা গ্রামের মনোহর আলী মাস্টারের বাড়িটিও মুখর হয়ে ওঠে অতিথি পাখির কলকাকলিতে। হাজার হাজার পাখির আগমনে পুরো এলাকা পাখির রাজ্যে পরিণত হয়।
সন্ধ্যা নামার সঙ্গে হাকালুকির বিভিন্ন বিল-জলাশয় থেকে এসে আশ্রয় নেয় বাড়ির গাছ গাছালিতে। ভোর হলেই পুনরায় পাখিরা চলে যায় খাবারের সন্ধানে হাওরের বিল বাদাড়ে। শুধু শীত মৌসুমে নয়, হাল্লা গ্রামের এ বাড়িটি বছর জুড়েই পাখির কলকাকলিতে মুখরিত। পাখিগুলো অন্য কোনো বাড়িতে কখনোই আশ্রয় নেয় না। এ বাড়িটি যেন তাদের শেকড়।
কিন্তু এ পাখি বাড়িতে সরাসরি প্রবেশের রাস্তা না থাকায় লোকজনকে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার ঘুরে পাখি বাড়িতে প্রবেশ করতে হয়। পর্যটকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে এবার বাড়ির মালিক নিজ উদ্যোগে অধিক দামে জমি ক্রয় করে রাস্তা নির্মাণের মহৎ উদ্যোগ নেন। তবে এ মহৎ কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন প্রতিবেশীরা । তারা নানা অজুহাতে রাস্তা নির্মাণে বাধা দিচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাড়ির ভেতর থেকে পশ্চিম দিকে রাস্তা তৈরির জন্য মাটি ভরাটের কাজ চলছে। তবে পশ্চিম দিকে রাস্তার জায়গায় মাটির কাজ বন্ধ রয়েছে। ‘পাখিবাড়ি’র মালিক মৃত মনোহর আলী মাস্টারের বড় ছেলে আবু সালেহ আহমদ জানান, প্রতিবেশী আব্দুল আজিজ, সেলিম উদ্দিন ও মনসুর আহমদ রাস্তা নির্মাণে বাধা দিচ্ছেন। স্বাধীনতা পরবর্তীকাল থেকে তাদের বাড়ির গাছগাছালিতে অতিথি ও দেশি পাখিরা আশ্রয় নেয়া শুরু করে। তাদের বাবা-মা এসব পাখিদের দেখাশুনা করতেন। সে ধারাবাহিকতায় ক্ষয়ক্ষতি স্বত্তে¡ও তারাও পাখিদের ভালবেসে যাচ্ছেন। ভোরবেলা ও সন্ধ্যাবেলা হাজারো পাখির কলকাকলির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে পাখিপ্রেমীরা তাদের বাড়িতে ভিড় জমান।
কয়েকজন প্রতিবেশি সরাসারি যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে দেয়ায় আগত পর্যটক ও তাদেরকে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার বিল-বাদাড় ঘুরে পাখি বাড়িতে প্রবেশ করতে দুর্ভোগ পোয়াতে হয়। পর্যটকদের সরাসরি পাখি বাড়িতে প্রবেশ ও রাস্তায় দাঁড়িয়ে পাখিদের উড়াউড়ির মনোমুগ্ধকর দুশ্য উপভোগের জন্য ২০১৬ সালে তিনি বহুগুন বেশি মূল্য দিয়ে প্রায় আড়াই শতাংশ জমি ক্রয় করেন। এবার রাস্তার কাজ শুরু করলে বাধা দেন প্রতিবেশি আব্দুল আজিজ গংরা। এজন্য তিনি ৫ জানুুয়ারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। এব্যাপারে তিনি প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন।
এব্যাপারে অভিযুক্ত আব্দুল আজিজ, সেলিম উদ্দিন ও মনসুর আহমদ জানান, ‘পাখিবাড়ি’ প্রবেশ রাস্তা নির্মাণের জন্য মৃত মনোহর আলী মাস্টারের ছেলেদের ক্রয়কৃত ভুমির অবস্থান সঠিক নয়, এজন্য তারা রাস্তা নির্মাণে বাধা দিচ্ছেন।
থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার জানান, ৩ ব্যক্তির বিরুদ্ধে হাকালুকির হাল্লা গ্রামের পাখিবাড়ির প্রবেশ রাস্তার নির্মাণ কাজে বাধা দেয়ার লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। সরেজমিন তদন্ত করে এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।