লাউতা বারইগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধার কবরস্থানের উপর দিয়ে ড্রেন নির্মানের অভিযোগ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের প্রতিবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বিয়ানীবাজারঃ বিয়ানীবাজারে বীর মুক্তিযোদ্ধার কবরের উপর দিয়ে ড্রেন ও রাস্তা নির্মানের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার লাউতা ইউনিয়নের বারইগ্রামে সরকারি কবরস্থানে শায়িত একই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আজির উদ্দিনের কবরের স্থান সনাক্ত করেন তার সন্তান রুম্মান আহমদ শান্ত (২২)। তিনি জানান, কবরস্থানের পাশ্ববর্তী ভূমির মালিক জোরপূর্বক এলাকার সবার বাধাকে উপেক্ষা করে আমার বাবার কবরসহ অনেকের কবর উপর দিয়ে জোরপূর্ব ড্রেন রাস্তা নির্মানের চেষ্টা করছে। তিনি এব্যাপারে গত ৭ মে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবর একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বারইগ্রামের বাসিন্দা সাবেক সেনা সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আজির উদ্দিন (স্মারক নং-যু,বিমসা,সিলেট/প্র৩/৫৫/২০০২/১৪৬৩) বিগত ২০০৮ সালে মৃত্যুবরন করেন। তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। গত ১৫ এপ্রিল কবরস্থান সংলগ্ন ভূমির মালিক ফারুক আহমদ ও তার পুত্র ফয়সল আহমদ, সরকারি জায়গা উল্লেখ করে জোরপূর্বক তার কবরের উপর দিয়ে ড্রেন নির্মান করেন। পরে স্থানীয় কবরস্থানের দায়িত্বশীলদের নিয়ে বাধা দিলেও তারা মানেনি।

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রুম্মান আহমদ শান্ত জানান, তার বাবাসহ সকল অরক্ষিত কবরকে যথাযথভাবে সংরক্ষন করতে গোরস্থানকে চিহ্নিত করা হোক। খবর পেয়ে কবরস্থান পরিদর্শনে আসেন বিয়ানীবাজার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি, সাধারন সম্পাদকসক সহ উপজেলা নের্তৃবৃন্দ।

এসময় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান টিটন জানান, এব্যাপারে যতো দ্রুত সম্ভব প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপে সমস্যার সমাধান চান তারা। সাধারন সম্পাদক সাহাব উদ্দিন লোদি জানান, অনতিবিলম্বে গোরস্থান ও কবর সংরক্ষিত করতে সীমানা নির্ধারন করে দুস্কৃতিকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিনি প্রশাসনকে অনুরোধ করেন। উপস্থিত স্থানীয় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা তাদের দাবীর সাথে একমত পোষন করেন।

গোরস্থানের সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, গোরস্থান দখলের পয়তারা করে সফল না হওয়ায় দুস্কৃতিকারিরা আদালতে একের পর এক হয়রানিমুলক মামলা দিয়ে যাচ্ছে, যা আমাদের সাধারন মানুষের জন্য লজ্জাজনক। তিনি তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত সমস্যা সমাধানের সবার সহযোগীতা কামনা করেন। সাধারন সম্পাদক জয়নাল আবেদিন এপলু জানান, স্থানীয়রা ড্রেন ও রাস্তা করতে বাধা দিলে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে স্থানীয়দের হয়রানি করছে অভিযুক্ত পরিবার। এতে উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী।

অভিযুক্ত ফারুক আহমদের বাড়িতে গেলে তিনি কথা না বলে তার স্ত্রী গনমাধ্যমের সাথে কথা বলেন। ফারুক আহমদের স্ত্রী সুরেতুন নেছা জানান, এই জায়গা দিয়ে দীর্ঘদিন আমাদের বাড়ির পানি গিয়েছে, আমরা শুধুমাত্র সুন্দর করে দেয়ার জন্য ড্রেন করেছিলাম। রাস্তা করার কথা তিনি অস্বীকার করলেও নির্মানাধীন ঘরের ভিতরে গোরস্থানের জায়গা রয়েছে বলে স্বীকার করেন। এসময় তিনি স্থানীয় কয়েকজন মুরব্বিকে দোষারোপ করে বলেন, মুরব্বিরা তাদেরকে গোরস্থানের দিকে তাদের ঢুকিয়ে দিয়েছেন।

খবর পেয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জামাল হোসেন কবরস্থান পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন। তিনি কবরস্থানের উপর দিয়ে ড্রেন ও রাস্তা তৈরির অপচেষ্টার নিন্দা জানান এবং সমস্যা নিরসনে সকল পক্ষকে নিয়ে বসে সমাধানের আশ্বাস দেন।

বিয়ানীবাজার উপজেলা সহকারি ভুমি কমিশনার তানিয়া আক্তার জানান, ডিসি খতিয়ানের জায়গায় কেউ ব্যাক্তিগত কাজে ড্রেন বা রাস্তা করা বেআইনী। বিষয়টি আদালতে রয়েছে, বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে আমরা কবরস্থানের ব্যাপারে সিন্ধান্ত নিবো।

বিয়ানীবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব বলেন, কবরস্থানের উপর দিয়ে ড্রেনের বিষয়টি জেনেছি। আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বলেছি বিষয়টি সবাইকে নিয়ে সুরাহা করতে।