শিক্ষা

নাম ঘোষনার ভয়ে বাকিতে খাওয়া শিক্ষার্থীরা ‘বাবু ভাই’–এর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন

নিউজ ডেস্কঃ শিক্ষার্থীদের বাকিতে খাইয়ে প্রায় পথে বসা মো. মানিক হোসেন ওরফে ‘বাবু ভাই’ এখনো তাঁর বকেয়া কোনো টাকা তুলতে পারেননি। তবে নতুন বছরের শুরুতে বাকিতে খাওয়া শিক্ষার্থীদের নাম প্রকাশের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে অনেকে মানিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ফোন দিয়ে নাম না প্রকাশ করার অনুরোধ জানাচ্ছেন মানিকের কাছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সামনে একটি খাবারের দোকান চালাতেন মো. মানিক হোসেন (৩৩)। শিক্ষার্থীরা তাঁকে বাবু ভাই বলে ডাকেন। বাজারের টাকা না থাকায় নিরুপায় হয়ে গত বৃহস্পতিবার তিনি তাঁর দোকানটি বন্ধ করে দিয়েছেন। এ নিয়ে প্রথম আলোতে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে দোকান বন্ধ হলেও দেনাদারদের অপেক্ষায় থাকছেন তিনি।

আজ শনিবার বিকেলে মুঠোফোনে মানিক প্রথম আলোকে বলেন, বাকিতে খাওয়া শিক্ষার্থীদের নাম-পরিচয়সহ বকেয়ার পরিমাণ নতুন বছরে প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছেন। এই ঘোষণার পর গতকাল শুক্র ও আজ শনিবার কয়েকজন শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতা তাঁকে ফোন দিয়েছেন। কেউ কেউ এসে দেখাও করেছেন। ১৯ হাজার টাকা বাকি রাখা এক শিক্ষার্থীর আজ-কালের মধ্যে টাকা পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সর্বোচ্চ বাকি রাখা শিক্ষার্থী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় চেয়েছেন। আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী ফোনে যোগাযোগ করেছেন। তাঁরা নাম না প্রকাশ করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

মানিক ২০০০ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে খাবারের দোকান চালান। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত পাঁচটি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা হলের ডাইনিং-ক্যানটিনের বাইরে মানিকের দোকানে খেয়ে থাকেন। মানিকের বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন মেহেরচণ্ডী এলাকায়। তাঁর দোকানে ১০ থেকে ১২ জন কাজ করতেন। দোকান বন্ধ হওয়ায় তাঁরাও কাজ হারিয়েছেন। এর আগে মানিকের দোকান থেকে ছাত্রলীগের দুই নেতা মাসিক চাঁদা তুলতেন। চলতি বছর জানাজানির পর সেটা বন্ধ হয়ে যায়। শুধু করোনার পর ক্যাম্পাস খুললে মানিকের কাছে ১০০-এর বেশি শিক্ষার্থী বাকি খেয়েছেন। তাঁদের কাছে বাকি পড়েছে আড়াই লাখ টাকা। এসব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সর্বোচ্চ ২৮ হাজার থেকে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা পর্যন্ত তিনি পাবেন। তাঁদের বেশির ভাগই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

মানিক প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘ছেলেপেলে বাকি খেয়ে টাকাপয়সা দিচ্ছে না। প্রায় আড়াই লাখ টাকা বাকি পড়েছে। এখন ক্যাশপাতি নেই, একেবারে শেষ হয়ে গেছে। বাজার করার টাকা নেই। যে দোকান থেকে বাকিতে জিনিস কিনতাম, তারা আর বাকি দিচ্ছে না। এ জন্য দোকান বন্ধ করে দিয়েছি। ছাত্রলীগের ছেলেপেলে দুই মাস ধরে কমিটি করে ম্যালা টাকা বাকি রেখেছে। অন্য শিক্ষার্থীরাও খালি বাকি খায়।’

মানিকেরা যৌথ পরিবারে থাকেন। এই দোকানের ওপর নির্ভর করে ১০-১২ জনের সংসার চলে। শিক্ষার্থীদের বাকি দিয়ে তিনিও ঋণে জড়িয়েছেন। মানিকের দাবি অনুযায়ী, মুদিখানায় তাঁর বাকি পড়েছে তিন লাখ টাকা। এখনো তিনি ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছেন।

মানিক মুঠোফোনে বলেন, শিক্ষার্থীরা টাকা দিলে তিনি দ্রুতই আবার দোকানটা খুলতে চান। তিনি অন্য কোনো কাজ ভালো পারেন না। সকাল হলেই তিনি বন্ধ দোকানে চলে আসেন। আশপাশে বসে থাকেন। তাঁর আশা, শিক্ষার্থীরা তাঁর অবস্থা বুঝে টাকা দ্রুতই পরিশোধ করবেন। তবে টাকা না দিলে শেষমেশ তিনি বাকিতে খাওয়া শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করতে বাধ্য হবেন।

বাকি দিয়ে ঋণগ্রস্ত হওয়া মানিকের খোঁজখবর নিচ্ছেন অনেকেই। মানিক বলেন, প্রাক্তন অনেক শিক্ষার্থী তাঁর খাবার দোকানে খেয়েছেন। গণমাধ্যমে তাঁর পরিস্থিতির কথা জেনে অনেকেই ফোন দিচ্ছেন। অনেকেই তাঁকে সাহায্য করতে চাচ্ছেন।

Back to top button