সিলেটের নাগামরিচের ঝালে খুশি কৃষকরা!
টাইমস ডেস্কঃ ঝালের জন্য বিখ্যাত নাগামরিচ। অঞ্চলভেদে বোম্বাই মরিচ বা ফোটকা মরিচ অথবা কামরাঙা হিসেবে পরিচিত এই মরিচ দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় সিলেটের শ্রীমঙ্গলে। অন্য গাছের সঙ্গে এ মরিচের চাষ করা হয়। সিলেট অঞ্চলে জনপ্রিয় এই মরিচ। দেশে-বিদেশে চাহিদা রয়েছে এ মরিচের। রফতানিও হয় বিভিন্ন দেশে। ইউকেসহ ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় বসবাসরত সিলেটের মানুষ নাগামরিচ দেশে থেকে নিয়ে যান বিভিন্ন উপায়ে।
২০০৭ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ঝাল মরিচ হিসেবে নাগামরিচ গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্বীকৃতি পায়। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর নাগা মরিচের দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৫ গুণ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবারের বন্যায় সিলেটের হরিপুর, বরিশালসহ যেসব নিম্নাঞ্চলে এ মরিচের চাষ হতো, সেসব এলাকার ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়াতে শ্রীমঙ্গলের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। কয়েকগুণ দাম বেড়ে যাওয়াতে খুশি স্থানীয় কৃষকরাও।
জানা গেছে, চলতি বছরে নাগামরিচের দাম গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ৪ থেকে ৫ গুণ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই বছরের বন্যায় সিলেটের হরিপুর, বরিশালসহ যেসব নিম্নাঞ্চলে নাগা চাষ হত সেই সব এলাকার ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়াতে শ্রীমঙ্গলের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। এতে স্থানীয় চাষীরা কয়েকগুণ দাম বেড়ে যাওয়াতে খুশি।
চাষিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সাধারণত মাঘ-ফাল্গুনে সাথী ফল (অন্য ফসলের সঙ্গে চাষ করা হয়) হিসেবে নাগা মরিচের চারা রোপন করা হয়। রোপনের তিন মাসের মধ্যে এর ফলন ধরে। মূলত লেবু বাগানে চাষ করা হয় এটি। এতে একইসাথে লেবু বাগানেরও যত্ন নেওয়া হয় এবং যে সার দেওয়া হয় তা দুটি গাছেরই কাজে আসে।
বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাস থেকে শুরু হয় মরিচ বিক্রি এবং তা চলে পরবর্তী ৩-৪ মাস। এই মাসগুলোই ভরা মৌসুম যদিও সারাবছরই কম-বেশি মরিচ বিক্রি হয়।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের কৃষক শামছুল হক জানান, গত বছর তার ৪০ একর লেবু বাগানে প্রায় ১০ হাজার নাগাগাছ লাগান এবং সপ্তাহে ৩০ হাজার মরিচ বিক্রি করেছেন। তখন দাম ছিল সর্বোচ্চ ৬০ পয়সা। এই বছর পরিমাণ কমিয়ে নাগাগাছের সংখ্যা ২ হাজার করেন। তবে ফলন ভালো হয়েছে, প্রতি সপ্তাহে তিনি ৬ থেকে ৭ হাজার পিস নাগামরিচ বিক্রি করছেন, যার দাম ২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৩ টাকা।
শামসুল হক বলেন, এই বছর নাগামরিচের এত দাম হবে বুঝতে পারলে গত বছরের মতো বেশি করে গাছ লাগাতাম। এতে প্রতিমাসে আমার লাখ টাকা আয় থাকত। তবুও এবার যা আছে তাতে ভালই আয় হচ্ছে।
আরেক চাষি কাজল রায় বলেন, আমি প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ হাজার পিচ নাগামরিচ বিক্রি করি, এতে গড়ে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার বিক্রি হয়। মাস শেষে সব খরচ বাদ দিয়ে আমার ১ লাখ টাকা আয় হয়। আমি গত বছর ৪ হাজার নাগামরিচের গাছ লাগিয়েছিলাম, এবার ৫ হাজার লাগিয়েছি। তবে গত বছরের চেয়ে এই বছর লাভবান বেশি কারণ, দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৫ গুণ।
শ্রীমঙ্গলের রাধানগর এলাকার চাষি বিশ্বজিৎ দেববর্মা বলেন, গত বছর ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা লস হয়। এই বছর ১১ হাজার নাগা মরিচের চাড়া লাগাই। আমার প্রায় ৮ লাখ টাকা ব্যয়। এবার বাজারে ৩ থেকে সাড়ে ৩ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। যেহেতু মৌসুমের শেষ তাই আমি নতুন করে আবারও বড় আকারে আবাদের চেষ্টা করছি।
আড়তদার হাসেম আলী জানান, প্রতিদিন কম করে হলেও ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার নাগামরিচ বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে দাম অনেক ভালো। তাই চাষিরা যেমন লাভবান হচ্ছে, তেমনি ব্যবসায়ীরাও হচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলায় আরও অধিক পরিমাণে ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নাগামরিচ চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। পাহাড় টিলাবেষ্টিত এ জেলা নাগামরিচ চাষের সম্পূর্ণ উপযোগী। চারা লাগানোর দেড় ২ মাস পর থেকেই ফুল ধরে এবং ফুল আসার ১ মাসের মধ্যে খাবার উপযোগী হয়। কাঁচামরিচ যেমন বেশি কাঁচা অবস্থায় ঝাল থাকে না। কিন্তু নাগামরিচ ছোট অবস্থায়ও ঝাল থাকে এবং সুগন্ধিতে মাতোয়ারা করে ফল ধরার শুরু থেকেই।
অধিদফতরের কর্মকর্তা সামছুউদ্দিন আহমেদ জানান, আমাদের কাছে তথ্য আছে ১০০ হেক্টরের। তবে বাস্তবে তা অনেক বেশি, কারণ লেবু বাগান, আনারস বাগান ও চা বাগানে অনেকে এই মরিচ চাষ করেন। এটি লাভজনক। সরকার থেকে কোনো প্রকল্প গ্রহণ না করায় আমরা আসলে তাদের পাশে সেইভাবে দাঁড়াতে পারিনি। তবে মৌখিকভাবে যতটুকু সম্ভব, আমরা সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এই বছর ফলন ভাল হয়েছে এবং দামও ভাল।