সুনামগঞ্জ

শান্তিগঞ্জে ইউপি সদস্যদের ‘পিটিয়ে’ পরিষদ থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি পূর্ব পাগলা ইউপি চেয়ারম্যানের

টাইমস ডেস্কঃ শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুক মিয়ার বিরুদ্ধে প্রকল্পের টাকা নিজের ইচ্ছামতো ব্যয়, অনিয়ম ও ইউপি সদস্যদের সাথে অসদাচারণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তারই (ইউপি চেয়ারম্যান) পরিষদের ১১ জন সদস্যই এমন অভিযোগ করেছেন। এজন্য ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের প্রতি সদস্যরা অনাস্থা জানিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার উজ্ জামানের কাছে এমন অভিযোগ এনে ইউনিয়ন পরিষদের ১১জন সদস্য লিখিত অভিযোগ ও অনাস্থাপত্র জমা দেন। অভিযোগের অনুলিপি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও সুনামগঞ্জের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক বরাবরে পাঠানো হয়েছে।

পরে একই দিনে শান্তিগঞ্জ প্রেসক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন অভিযোগকারী ১১ ইউপি সদস্য।

এসময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন।

বক্তব্য রাখেন- ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য কোহিনূর বেগম, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য ছুরতুন নেছা এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আমির আলী।

লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, পূর্ব পাগলা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুক মিয়া নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি ইউপি সদ্যস্যদের সাথে কোনো ধরণের সমন্বয় ছাড়াই তাহার একক সিদ্ধান্তে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। ক্ষমতা ও দাপটের কাছে ইউপি সদস্যরা সবসময়ই উপেক্ষিত ও অবমূল্যায়িত হয়ে আসছেন। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় (২য় পর্যায়) ৩২ জন শ্রমিক দিয়ে ৬ নম্বর পিআইসি মোট ৫ লাখ ১২ হাজার টাকা বরাদ্দে ‘চিকারকান্দি আগার বাড়ির রাস্তা হইতে বেড়িবাধের মুখ পর্যন্ত মাঠি ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজ গত মে-জুন মাসে ১,২,৩ নম্বর (সংরক্ষিত) ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কোহিনুর বেগম প্রকল্প সভাপতি ও আবুল কাশেম সেক্রেটারি থেকে কমিটির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু প্রকল্পে বরাদ্দ হওয়া টাকা চেয়ারম্যান নিজে উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন। ইউপি সদস্য কোহিনুর বেগম প্রকল্পের টাকা পাওয়ার জন্য চেয়ারম্যানের কাছে আকুতি-মিনতি করিলেও চেয়ারম্যান তাহার প্রাপ্য টাকা না দিয়ে বিভিন্ন ধরণের হুমকি প্রদর্শন করেন। গত ২৩ অক্টোবর তারিখে ইউপি কার্যালয়ে ইউপি সদস্য কোহিনুর বেগম সকল ইউপি সদস্যের উপস্থিতিতে তাহার প্রাপ্য টাকা চেয়ারম্যানের নিকট চাইলে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তখন চেয়ারম্যান ঐ নারী ইউপি সদস্যের চরিত্র নিয়ে কূরুচিপূর্ণ কথাবার্তা ও অশালিন ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং অফিস থেকে চলে যেতে বলেন। উপস্থিত সকল ইউপি সদস্যগন চেয়ারম্যানকে শান্ত করতে চাইলে সবাইকে সম্মিলিতভাবে টেবিল চাপডড়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালজ করেন।

এছাড়া ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে জেলা প্রসাশক কার্যালয় থেকে বিশেষ সহায়তা তহবিলের দরিদ্র নারীদের কর্মসংস্থনের জন্য ৮টি সেলাই মেশিন এবং ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ইউনিসেফ কর্তৃক উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ১টি নলকূপ ও ৫টি ল্যাট্রিন বরাদ্দ হলে চেয়ারম্যান কিভাবে বিতরণ করেছেন ইউপি সদস্যরা অবগত নন। এ ব্যাপারে গত ২৩ অক্টোবর জানতে চাওয়ায় চেয়ারম্যান এটা তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার, ভালো লাগলে অফিসে আসবেন না লাগলে আসবেন না-সহ নানা কথা বলেন। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান সকল ইউপি সদস্যকে হুমকি দেন এবং পিটিয়ে পরিষদ থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ।

পূর্ব পাগলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুক মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে৷ যারা অভিযোগ করেছেন তারা বিভিন্ন সময় মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে টাকা নিলে আমি বাধা দেই। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছে।

‘প্রকল্পের টাকা উত্তোলনের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি এ টাকার ব্যাপারে কোনো কিছুই জানি না। পিআইসির সদস্যরাই টাকা তুলেছেন।’

অশালীন কথা-বার্তার বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করে বলেন, ‘সকলের ঘরে মা-বোন, ভাই আছে। আমি এমন ব্যবহার কখনো কারো সাথে করিনি। গল্লা দিয়ে মেরে কাউকে বের করে দেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।’

অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার উজ্ জামান বলেন, ‘এখন কাজের ধারাবাহিতা বজায় রেখে তদন্ত করা হবে। যদি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Back to top button