আজ ২৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশের ১০০টি সেতুর সাথে খাগড়াছড়ির ৪২টি সেতু উদ্বোধন করবেন। ইতিমধ্যে এই সংক্রান্ত একটি চিঠি খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী এ. কে. এম. মনির হোসেন পাঠান স্বাক্ষরিত চিঠিতে এই তথ্য জানানো হয়।
ইতিমধ্যে সেতুগুলোর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর খাগড়াছড়ির অধিকাংশ স্টিলের পাটাতনের বেইলি সেতু সরিয়ে নির্মাণ করা হয় পাকা সেতু। সবশেষ জেলা উপজেলার আরো ৪২টি পাকা সেতু উদ্বোধন হবে আজ। এতে আমূল পরিবর্তন আসবে খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, ‘খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন সড়কে পিসি গার্ডার সেতু, আরসিসি সেতু ও আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প’ এর আওতায় প্রায় ২শ ৩৮কোটি ২৪লাখ টাকায় ৪২টি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে দীর্ঘতম সেতুটি হচ্ছে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা-বাবুছড়া-লোগাং-পানছড়ি সড়কের লোগাং সেতু।
১৪৩ দশমিক ০৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১১কোটি ৭১ লক্ষ টাকা। দৈর্ঘ্যে দ্বিতীয় মানিকছড়ি-লক্ষীছড়ি সড়কে ১০০ মিটার ধুরুং খাল সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা। দিঘীনালা-বাবুছড়া-লোগাং-পানছড়ি সড়কে ৭৯.০৫ মিটারের পুজগাং বাজার সেতু নির্মাণ ব্যয় হয়েছে কোটি ৩২ লাখ টাকা।
মাটিরাঙ্গা তানাক্কা পাড়া সড়কের ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের গোমতী সেতু নির্মাণে ব্যয় ৬ কোটি টাকা, মানিকছড়ি-লক্ষীছড়ি সড়কে ৪৪.০২ মিটার জুর্গাছড়ি সেতুর নির্মাণ ব্যয় ৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা, হেঁয়াকো-রামগড়-জালিয়া পাড়া সড়কে সোনাইপুল সেতু নির্মাণে ব্যয় ৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা, দীঘিনালা-বাবুছড়া-লোগাং-পানছড়ি সড়কে ৪৪ মিটার দৈর্ঘ্যের পাবলাখালী সেতুর নির্মাণ ব্যয় ৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
একই সড়কে ৪৪ মিটার দৈর্ঘ্যের বাঘাইছড়ি সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, ৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের বাবুরোপাড়া সেতু নির্মাণে ব্যয় ৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কে ৩৭ মিটার দৈর্ঘ্যের পেরাছড়া সেতু নির্মাণে ব্যয় ৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, একই সড়কে ৩৭ মিটার দৈর্ঘ্যের গাছবান সেতু নির্মাণে ব্যয় ৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, ৩৭ মিটার দৈর্ঘ্যের কুকিছড়া সেতু নির্মাণে ব্যয় ৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, ৩৭ মিটার দৈর্ঘ্যের কুরাদিয়াছড়া সেতু নির্মাণে ব্যয় ৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, একই দৈর্ঘ্যের লতিবানছড়া সেতু নির্মাণে ব্যয় ৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
একই দৈর্ঘ্য ও ব্যয়ে নির্মাণ হচ্ছে হাটহাজারি-মাটিরাঙ্গা সড়কের খাগড়াপুর সেতু, রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি সড়কে ঠাকুরছড়া সেতু, মানিকছড়ি-লক্ষীছড়ির হাতিছড়া সেতু, জালিয়াপাড়া-মহালছড়ি সড়কের সিন্দুকছড়ি সেতু ও পঙ্খিমুড়া সেতু৷
দীঘিনালা-বাবুছড়া-লোগাং সড়কের দেওয়ানছড়া সেতু নির্মাণ হয়েছে ৪ কোটি ৪১ লাখ টাকায়, বাঘাইহাট-মারিশ্যা সড়কের পতেঙ্গাছড়া সেতু নির্মাণ হয়েছে ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকায়, একই সড়কের নাকাপা সেতু নির্মিত হয়েছে ৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকায়, দীঘিনালা-বাবুছড়া সড়কের জারুলছড়ি সেতু নির্মিত হয়েছে ৪ কোটি ২৬ লাখ টাকায়, মহালছড়ির চোংড়াছড়ি সেতু নির্মাণ হয়েছে ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকায়, একই সড়কে মুসলিম পাড়া সেতু নির্মাণ হয়েছে ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকায়।
হেঁয়াকো-রামগড়-জালিয়াপাড়া সড়কে ৩১ মিটার দৈর্ঘ্যের পাতাছড়া সেতু নির্মাণ হয়েছে ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকায়, জালিয়াপাড়া-সিন্দুকছড়ি সড়কে ২৮ মিটার দৈর্ঘ্যের ধুমনীঘাট ও যৌথখামার সেতু নির্মিত হয়েছে ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা করে।
দীঘিনালা-বাবুছড়া-লোগাং সড়কে ২৮ মিটার দৈর্ঘ্যের বড়পেরা সেতু নির্মিত হয়েছে ৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকায়, খাগড়াছড়ি পানছড়ি সড়কে ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের ছোটনালা ব্রিজের নির্মাণ ব্যায় ৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। লক্ষীছড়ি সড়কে ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের মগাইছড়ি সেতু নির্মিত হয়েছে ৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকায়, পানছড়ি সড়কে ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের লোগাং বাজার সেতু নির্মিত হয়েছে ৪ কোটি ২৩ লাখ টাকায়, একই দৈর্ঘ্যের দীঘিনালার বুজ্যেনাল সেতু নির্মিত হয়েছে ৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকায়, মগমারাছড়া সেতু নির্মিত হয়েছে ৪ কোটি ৯ লাখ টাকায়।
খাগড়াছি-পানছড়ি সড়কের ২২ মিটার দৈর্ঘ্যের পাকুজ্জাছড়ি সেতু নির্মিত হয়েছে ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকায়, মানিকছড়ি সড়কে ২২ মিটার দৈর্ঘ্যের দুল্লাতলী সেতু নির্মিত হয়েছে ২ কোটি ৭২ লাখ টাকায়, পানছড়ি সড়কের ১৯ মিটার দৈর্ঘ্যের ভাইবোনছড়া ও কলাবাগান সেতু নির্মিত হয়েছে ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা করে। মাটিরাঙ্গার তবলছড়ি ও তাইন্দং সেতু নির্মিত হয়েছে ১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা করে।
খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কে ১৬ মিটার দৈর্ঘ্যের কৃষি গবেষণা সেতু নির্মিত হয়েছে ৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকায়, দীঘিনালা সড়কের হাতিমারাছড়া সেতু নির্মিত হয়েছে ৩ কোটি ৪১ লাখ টাকায়। ইতোমধ্যে সবগুলো সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আজ তার শুভ উদ্বোধনের।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুজন চাকমা বলেন, আগে খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কে অধিকাংশ সড়কে অস্থায়ী বেইলি ব্রিজ ছিল। ব্রিজের পাটাতন খুলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটত। আবার মেরামত করে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে কখনো কখনো এক থেকে দুইদিন লাগত। এতে স্থানীয়দের কৃষিপণ্য পরিবহন, রোগী পরিবহনসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্থ হতো। তবে এখন এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে জেলাবাসী। এখন সব স্থায়ী সেতু। তাই যান চলাচল আগের মত বিগ্ন ঘটবে না।
খাগড়াছড়ি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি কংজরী চৌধুরী বলেন, খাগড়াছড়ি কৃষি নির্ভর এলাকা। এখানকার উৎপাদিত কৃষি পণ্য সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। স্থায়ী সেতু হওয়ায় এখন ব্যবসায়ীরা চিন্তামুক্ত থেকে পণ্য পরিবহন করতে পারবে। যা সামগ্রিক অর্থে জেলাবাসী আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এটি সরকারের সুদূরপ্রসারী চিন্তার ফসল।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সারাদেশের মতো খাগড়াছড়িতে সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। তৎকালীন বেইলি সেতু দিয়ে সড়কে যান চলাচল করতে কখন যাত্রীসহ সেতু ভেঙে যায়, এই ভয়ে আমরা আতঙ্কিত থাকতাম। এখন জেলা-উপজেলার সাথে একদম নিরাপদ-নিরবিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর জন্য জেলাবাসীর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, আমরা জেলার ৪২টি সেতু নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি সারাদেশের ১০০টি সেতুর সাথে খাগড়াছড়ির ৪২টিরও উদ্বোধন করবেন।
উল্লেখ্য, এর আগে ১শ ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলায় ১৮টি স্থায়ী সেতু খাগড়াছড়ি-ঢাকা ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনেছে।
এতে স্থানীয়দের যেমন দুর্ভোগ কমবে, তেমনি জেলায় জীবনমান উন্নয়নসহ পর্যটনখাত সমৃদ্ধ হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
