জাতীয়

প্রেমের টানে বরিশালে এসে ভারতীয় যুবকের মৃত্যু

নিউজ ডেস্ক- প্রেমের টানে বরিশালে আসার তিন দিন পর মৃত্যু হয়েছে এক ভারতীয় যুবকের। প্রেমিকার সঙ্গে হোটেল থাকার একদিন পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি, এরপর বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্সেই মৃত্যু হয় ওই ভারতীয় নাগরিকের।

মৃত জাভেদ খান (২৯) ভারতের উত্তর প্রদেশের হাসানপুরের বাসিন্দা।

জাভেদ খানের প্রেমিকা ফাতেমা তুজ জোহরা খুশি বলেন, হঠাৎ করে বুকে ব্যথা উঠে অসুস্থ হয়ে পড়লে ১০ সেপ্টেম্বর বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় জাভেদকে। এরপর ১২ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে চিকিৎসকদের পরামর্শে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেওয়ার প্রস্তুতি নিলে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠানোর পরেই মারা যায় সে। জাভেদ অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তার পরিবারকে জানিয়েছি, মৃত্যুর পরও ভোর পৌনে ৫টার দিকে তাদের জানিয়েছি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১০ সেপ্টেম্বর থেকে হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি ছিল জাভেদ খান।

বরিশাল নগরীর কাটপট্টি এলাকার হোটেল এ্যাথেনার অভ্যর্থনাকারী মো. সাব্বির জানান, গত ৯ তারিখ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে জাবেদ (৩০) নামে একজন ভারতীয় নাগরিক তাদের হোটেলে আসে এবং ৪১০ নাম্বার রুম ভাড়া নেন। তবে তার সঙ্গে বন্ধু পরিচয়ে একজন মেয়ে দেখা করতে আসেন এবং কিছু সময় রুমে থাকেন। পরের দিন ১০ তারিখ বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ রুমটি ছেড়ে দেন এবং রিসিপশনে জাভেদ তার ব্যাগ রেখে যান, পরে নিয়ে যাবে বলে। পুনরায় ১১ তারিখ ওই মেয়েটি এসে ব্যাগ নিয়ে যায়। আর বুধবার সকালে পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি লোকটি মারা গেছে। পুলিশ আমাদের কাছ থেকে জাবেদের আসা যাওয়া সব তথ্য নিয়ে গেছে। পুলিশের সঙ্গে তখন ওই মেয়েটিও ছিল।

বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী কমিশনার খলিলুল রহমানের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি ইনকমপ্লিটলি কিছু বলতে রাজি হননি।

বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. রিফায়তুল হায়দার বলেন, মৃত ব্যক্তির শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি, তবে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিছু লেখা ছিল। তিনি কিছু রোগে ভুগছিলেন।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় নাগরিক জাভেদ খান ৮ তারিখ ভারত থেকে রওনা দিয়ে ৯ তারিখ সকালে বরিশালে আসেন। বরিশালের বাসিন্দা তার প্রেমিকাকে নিয়ে একটি হোটেলে ওঠেন। তারপর তারা ঘোরাঘুরিও করেছিল। একপর্যায়ে তার পেইন হচ্ছিল। সে সদর হাসপাতালে যায়, সেখানে কিছু টেস্ট করিয়ে আবার হোটেলে যায়। তারপরের দিন আবার পেইন হলে সে অ্যা পোলোতে গিয়ে ডাক্তার দেখায়, সেখানের ডাক্তার তার রিপোর্ট দেখে দ্রুত বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য বলেন। রাত ২টার দিকে জাভেদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় তাকে ঢাকায় রেফার করতে বলা হয়। ঢাকায় নেওয়ার পথে ভোর রাত ৪টার দিকে সে মারা যায়।

তিনি বলেন, ফাতেমা তুজ জোহরা খুশি নামের মেয়েটির সঙ্গে জাভেদ খানের অনেকদিন যাবত সম্পর্ক ফেসবুকের মাধ্যমে। ২০১৮ সালের দিকে জাভেদ আরেকবার বাংলাদেশে এসেছিল।

পুলিশ কমিশনার বলেন, চিকিৎসকরা একটি বোর্ড তৈরি করেছে। জাভেদ খানের বুকে অনেক সমস্যা রয়েছে, কিডনিতেও সমস্যা রয়েছে। এছাড়া তার লিভারেও অনেক সমস্যা ছিল। তাছাড়া তার হাতে পায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। ভারতেও সে চিকিৎসা নিয়েছিলো, সেখানকার ডাক্তাররা তাকে কিছু কিছু জিনিস অর্থাৎ অ্যালকোহল জাতীয় জিনিস খেতে নিষেধ করেছিল। আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে এটা পাচ্ছি। লাশ হস্তান্তরের বিষয়টি পুরো ভারতীয় দূতাবাসের। তারা যেভাবে বলবে সেভাবেই লাশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জাভেদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি আমরা, তাদের কোনো অভিযোগ পাইনি। পুরো বিষয়টি তদন্ত চলছে।

Back to top button