কোনো বিতর্কিত নির্বাচন করে আমরা সমালোচিত হতে চাই না বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান।
শনিবার (৮ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে জেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে দেশের ৬১ জেলার ডিসি ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নির্বাচন। স্থানীয় সরকারের পাশাপাশি সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। রাজনৈতিকদলসহ সবার চাওয়া একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। সাংবিধানিকভাবে এই গুরুদায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত। শপথ নেওয়ার পর থেকে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতিকে উপহার দেওয়া। যেকোনো মূল্যে আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চাই।
আহসান হাবিব খান বলেন, উপস্থিত জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, নির্বাচনের সময় আপনারা আমাদের বিশ্বস্ত প্রতিনিধি হয়ে কাজ করবেন। মাঠ পর্যায়ে সুষ্ঠু নির্বাচন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব আপনাদের ওপর। মনে রাখতে হবে আপনারা সবাই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। নির্বাচন কমিশনের প্রত্যাশা সবাই যেন তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব শতভাগ নিরপেক্ষ হয়ে পালন করে। কখনো দলীয় মনোভাব পোষণ করা যাবে না বা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, দায়িত্ব পালনে প্রার্থী, রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কখনো অতি উৎসাহী হয়ে এমন কোনো আচরণ করবেন না যাতে আপনাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।
‘আরেকটি বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যদি পূর্ব থেকেই ফৌজদারি বা ক্রিমিনাল মামলা থাকে সেটি ভিন্নভাবে আদালতে স্বাভাবিক গতিতে চলবে। কিন্তু অযথা নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলার অভিযোগ পাওয়া যায়, এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বচ্ছ মনোভাব দেখাতে হবে। নির্বাচনে প্রার্থী বা নেতাকর্মীদের মধ্যে যেন কোনো ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি না হয় সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, কোনো প্রার্থীর বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আক্রমণ হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়ার বিষয়টিতে আপনারা অবশ্যই গুরুত্ব দেবেন। এখানে কোনো প্রকার ছাড় না দিয়ে আইনগতভাবে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে হবে। বিগত সময়ে নির্বাচনের আগে পূর্ববর্তি এবং পরে সংখ্যালঘু সম্প্রদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা পরিলক্ষিত হয়। এ বিষয়ে অধিকতর সতর্ক থাকতে হবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। আমরা চাই না নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ওইসব জায়গায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটুক। সেজন্য আপনারা পূর্ব প্রস্তুতি নেবেন।
‘নির্বাচনের আগে-পরে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পক্ষ বা বিভিন্ন মহল থেকে নানা ধরনের গুজব বা অপপ্রচার ছড়ায় এবং অনেক মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে বিশৃংখলা পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করে। আপনারা এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। কোনো গুজবের সন্ধান পেলে বা এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হলে আপনারা দ্রুত গুজব সৃষ্টিকারীদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। আপনারা জেলা/উপজেলা পর্যায়ে সার্বিকভাবে খোঁজ-খবরের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো গুজব ছড়াচ্ছে কি না সে বিষয়ে নজরদারি বৃদ্ধি করবেন।’ যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নীতিমালা অনুসরণ করে খবর সংগ্রহের জন্য গণমাধ্যমকর্মীরা দেশব্যাপী কর্মরত থাকেন। তারা নির্বাচনী এলাকার এবং বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের সংবাদ সংগ্রহ করে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার করেন। তাদের কাজে যাতে বাধা সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করবেন। নির্বাচনে অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছতা গণমাধ্যমকর্মীরা দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরবেন। মনে রাখতে হবে, গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের কাজে অযৌক্তিক বাধাপ্রাপ্ত হলে বিভিন্ন মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে। বিষয়টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করবেন।
কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বলেন, নির্বাচনের সময় অনেক প্রভাবশালী মহল বা রাজনৈতিক দলের নেতা, সাবেক/বর্তমান মন্ত্রী, এমপিসহ নানা মানুষ এলাকায় প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ নির্বাচনের সময় পেশিশক্তি, অর্থশক্তি বা ক্ষমতা প্রদর্শনের চেষ্টা করেন। কালো টাকার ব্যবহারে কথাও শোনা যায়। আপনারা চোখ-কান খোলা রেখে এই বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করবেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা না থাকলে কখনোই সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব না। আমরা চাই প্রশাসন ক্যাডার এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান থাকুক এবং একে অপরের সহযোগী হিসেবে কাজ করুক। এতে নির্বাচনের পরিবেশ সুন্দর থাকবে। প্রার্থী, ভোটার রাজনৈতিক দল, পর্যবেক্ষক থেকে শুরু করে সব মহল আপনাদের তথা নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পাবে।
সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্যান্য কমিশনার, ইসি সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণাণয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, সব এসপি-ডিসিসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
