সিলেটে বিশ্বনাথে মসজিদ-মাদ্রাসা-বাজারের অর্থ নিয়ে বিএনপি নেতা লাপাত্তার অভিযোগ!

সিলেটের বিশ্বনাথে উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি ও লামাকাজী বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া তালুকদার গত দুই-আড়াই মাস থেকে বাজার পরিচালনা কমিটির ফান্ডের প্রায় অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কিবরিয়া লামাকাজী ইউনিয়নের সাংগিরাই গ্রামের গেলাম মোস্তফা তালুকদারের পুত্র। লাপাত্তা হওয়া বিএনপি নেতা কিবরিয়া চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারী অনিুষ্ঠিত লামাকাজী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ‘আনাসর’ প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করে জামানত হারান।
লামাকাজী বাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন গত দুই-আড়াই মাস থেকে কিবরিয়া লাপাত্তা রয়েছেন ও তার পরিবারের লোকজনও কিবরিয়ার কোন সন্ধান ব্যবসায়ীদের দিচ্ছেন না। তবে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ইউরোপ পাড়ি দিতে গিয়ে বিএনপি নেতা গোলাম কিবরিয়া তালুকদার বর্তমানে লিবিয়ায় মাফিয়াদের হাতে বন্ধি রয়েছেন।
উপজেলার লামাকাজী বাজার মসজিদের মোতাওয়াল্লী আব্দুল মালিক সাংবাদিকদের জানান, বাজার কমিটির ফান্ডের বড় একটি অংশ বাজারের মসজিদ ও মাদ্রাসায় য়ায়। গত ২ বছরে বাজার ফান্ড থেকে মসজিদে প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ টাকার আসার কথা। কিন্তু আসেনি।
জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম লামাকাজী মাদ্রাসার মোহতামিম ও লামাকাজী বাজার পরিচালনা কমিটির সদস্য মুফতি ময়নুল ইসলাম জানান, তিনি গত বছর বাজার কমিটির ফান্ড থেকে ৩৫ হাজার টাকা মাদ্রাসায় পেয়েছে। এবছর এখনও কোন টাকা পাননি।
সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, লামাকাজী ইউনিয়নের ৯টি গ্রাম নিয়ে গঠিত বাজার পরিচালনা কমিটি। বিগত কমিটি ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে বিএনপি নেতা গোলাম কিবরিয়া তালুকদারকে নগদ ৬ লাখ টাকাসহ লামাকাজী বাজার পরিচালনা কমিটির দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর বাজার সাবলিজ বাবদ আয় হয় ১২ লক্ষ টাকা। গরু বাজার সাবলিজ বাবদ ৫৩ লক্ষ টাকা। বাজারে দোকান ভিটা বিক্রয় বাবদ ২৫ লক্ষ টাকা। সর্বমোট ৯৬ লক্ষ টাকার আয় থেকে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ লক্ষ টাকা ফান্ডে থাকার কথা এমনটাই জানিয়েছেন বাজরের কয়েকজন ব্যবসায়ী। তারা বলেন, গত দুই বছর থেকে গায়ের জোরে বিএনপি নেতা কিবরিয়া কোন আয়-ব্যায়ের হিসাব কমিটিকে দিচ্ছেন না। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশায় বাজার, সমজিদ ও মাদ্রাসা কমিটি। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকে নানা মন্তব্য করেছেন।
লামাকাজী বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি কিরণ মিয়া জানান, গোলাম কিবরিয়ার দুই আড়াই মাস থেকে কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারের একটি বড় অংকের টাকা তার (গোলাম কিবরিয়া) কাছে রয়েছে। আমরা কোন হিসাব-কিতাব পাচ্ছিনা। আমরা তার পরিবারের কাছে আমাদের প্রতিনিধি পাটিয়েছি। তার বাবা গোলাম মোস্তফা জানিয়েছেন নিজ পুত্র কিবরিয়া কোথায় আছেন তারা তা জানেন না, তারা কিবরিয়ার কোন খোঁজ পাচ্ছেন না।
লামাকাজী বাজার পরিচালনা কমিটির সহ সভাপতি এ কে এম দুলাল, লামাকাজী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জানে আলম, ব্যবসায়ী গোলাম মৌলাসহ একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, গোলাম কিবরিয়া বাজারের প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে সম্ভবত প্রবাসের উদ্দ্যেশ্যে দেশ ত্যাগ করেছেন। গত আড়াই মাস থেকে তিনি এলাকা ছাড়া রয়েছেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, গোলাম কিবরিয়া প্রায় অর্ধ কোটি টাকার আত্মসাৎ করে লাপাত্তা রয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে গোলাম কিবরিয়ার বাড়িতে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়া বলেন, গোলাম কিবরিয়া বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তার কাছে বাজারের বড় একটি ফান্ড রয়েছে। এই ফান্ড থেকে বাজারের মসজিদ ও মাদ্রাসায় টাকা যায়। কিন্তু আড়াই মাস থেকে সে (কিবরিয়া) উদাও রয়েছেন। তাকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার এমন কাণ্ডে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।