চিকিৎসা করাতে গিয়ে ভারতে মৃত্যু, বাংলাদেশির মরদেহ দেশে আনা নিয়ে বিপাকে স্বজনরা

ভারতে চিকিৎসা ও ভ্রমণের উদ্দেশে এসে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় এক বাংলাদেশি নাগরিকের। কিন্তু সেই মরদেহ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতেই যত বিপত্তি। মরদেহ দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্থানীয় হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতিপত্র নিয়েও ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে থাকেতে হয় বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত কার্যত হতাশ হয়ে সীমান্ত থেকে ফের হাসপাতালে ফিরে আসতে হয় মৃতের স্বজনদের।
বিষয়টি জানতে পেরেই ওই মরদেহ নিজের দেশে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় ইন্দো-বাংলা প্রেসক্লাব, কলকাতা। এরপর কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপরই মিশনের উদ্যোগে ওই মরদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য মেলে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র। জানা গেছে, গত সপ্তাহের শুক্রবার ভারতে আসেন বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার বেনিচক গ্রামের বাসিন্দা শ্রীমন্ত কর্মকার ও সন্তোষ কর্মকার নামে দুই ব্যাক্তি। আত্মীয়দের বাড়িতে ভ্রমণ এবং চিকিৎসা- মূলত এই দুই উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের ভারতে আসা।
শুক্রবারই পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার মঙ্গলবাড়ী খইহাট্টা গ্রামে এক আত্মীয়র বাড়িতে উঠেন শ্রীমন্ত। এরপর চলতি সপ্তাহের বুধবার মালদা শহরের বুড়াবুড়িতলা এলাকায় অন্য এক আত্মীয় বাড়িতে ঘুরতে আসেন। কিন্তু সেখানে এসেই অসুস্থ হয়ে যান শ্রীমন্ত কর্মকার নামে ৫০ বছর বয়সী ওই বাংলাদেশি নাগরিক। এরপর দ্রুততার সঙ্গে তাকে মালদা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। এরপর মরদেহ ময়নাতদন্তও করা হয়।
পরে হাসপাতাল এবং স্থানীয় জেলা প্রশাসনের তরফে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেয় শ্রীমন্ত কর্মকারের আত্মীয়-স্বজন। কিন্তু হিলি সীমান্তে মরদেহ নিয়ে গেলও কিছু আইনি জটিলতার কারণে তাদের ফের মালদা হাসপাতালে ফিরে আসতে হয়। এমন অবস্থায় সরকারের কাছে তাদের আর্জি, মরদেহ যেন বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
শ্রীমন্ত কর্মকারের চাচাতো ভাই লিটন কর্মকার জানান, শ্রীমন্ত কর্মকার বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার বেনিচক গ্রামের বাসিন্দা। গত বৃহস্পতিবার তার ময়নাতদন্ত করা হয়। বাংলাদেশে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে লিখিত আনা হয়। কিন্তু সেই মরদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি আন্তর্জাতিক সীমান্তে আসলে বিএসএফের পক্ষ থেকে আটকে দেয়া হয়।
বিএসএফের তরফে বলা হয়, মরদেহ নিজ দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য কলকাতাস্থত বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার থেকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র নিয়ে আসতে হবে। এরপর উপায়ান্তর না দেখে সেই মরদেহ সীমান্ত থেকে ঘুরিয়ে ফের মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মর্গের সামনে রাখা হয়। ইতোমধ্যে ওই মরদেহ থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কার্যত নিরুপায় হয়ে ওই মরদেহ নিয়েই তারা মেডিকেল কলেজে চত্বরে বসে থাকেন। মরদেহ কিভাবে বাংলাদেশে নিয়ে যাবে তা ভেবেই অকূল কিনারায় পড়েন তারা। যদিও বিশেষ অনুরোধের পর ওই মরদেহ ফের হাসপাতালের মর্গের ভেতরে রাখা হয়।
মৃত ব্যক্তির আত্মীয় তপন কর্মকার জানান, শ্রীমন্ত কর্মকারের মরদেহ হিলি সীমান্তে নিয়ে যাওয়ার পরই বিএসএফের কর্মকর্তারা জানান বাংলাদেশ হাইকমিশনের তরফ থেকে ছাড়পত্র লাগবে। এরপরই আমরা মরদেহ নিয়ে মালদহ জেলা হাসপাতালে ফিরে আসি। যদিও ওই মরদেহ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহের জন্য মৃত ব্যক্তির সঙ্গে থেকে ভারতে আসা সন্তোষ কর্মকার শুক্রবার সকালে মালদা থেকে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন কার্যালয়ের উদ্দেশে রওনা দেন। এরই মধ্যে খবরটি পাওয়ার পরই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় কলকাতার ইন্দো-বাংলা প্রেসক্লাব। ফোনে লিটন কর্মকার এবং সন্তোষ কর্মকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
অন্যদিকে বাংলাদেশ উপদূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মো. বশির উদ্দিনকেও বিষয়টি জানানো হয়। তিনি আশ্বাস দেন মিশনের তরফ থেকে দ্রুততার সঙ্গে প্রয়োজনীয় নথি সরবরাহ করা হবে। এরপর এদিন দুপুরের দিকে মিশনে পৌঁছন সন্তোষ কর্মকার। এসময় শ্রীমন্ত কর্মকারের মরদেহ বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নথি সন্তোষের হাতে তুলে দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে সন্তোষ কর্মকার জানান, আমরা চিকিৎসা করাতে এসেছিলাম কিন্তু তার আগেই আমাদের ওই সহকর্মী মারা যান। এরপর আইনি বিষয়টি না জেনেই আমরা হিলি সীমান্তে চলে যাই। কিন্তু সেখান থেকে বলা হয় প্রয়োজনীয় নথি ছাড়া মরদেহ নিয়ে যাওয়া যাবে না। এরপরই ইন্দো-বাংলা প্রেসক্লাবের সহযোগিতা এবং কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের তৎপরতায় খুব দ্রুত কাজটি সম্পন্ন হয়।
ইন্দো-বাংলা প্রেসক্লাবের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে মিশনের কর্মকর্তা বশির উদ্দিন জানান, ক্লাবের তরফ থেকে আমরা জানতে পারি যে বাংলাদেশের এক নাগরিক মালদায় মারা যান এবং তাকে সীমান্তে দিয়ে পার করা যাচ্ছে না। এরপরই তার আত্মীয়স্বজনদের উপকমিশনে আসতে বলা হয়। এরপর মিশনের তরফে ফরেনার রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (এফআরআরও)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে শনিবারই শ্রীমন্তের মরদেহ বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হবে।