বড়লেখামৌলভীবাজার

বড়লেখায় প্রতিষ্ঠাতার নাম বিভ্রাট, ৮ মাস বন্ধ স্কুল

আব্দুর রব, বড়লেখা: বড়লেখায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও বাগান কর্তৃপক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে প্রায় ৮ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দক্ষিণগুল চা বাগানের বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

স্কুল বন্ধ থাকায় শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার শঙ্কায় রয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, বাগান কর্তৃপক্ষ স্কুল বন্ধ করে দিয়ে শিক্ষার্থীদের চা পাতা চয়নে নিয়োজিত করেছে। চলমান স্কুল বন্ধ করায় অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থী বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিকের চাকরি নিয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণগুল চা বাগানের (সাবেক কেরামতনগর) চা কারখানা ও কার্যালয় সংলগ্ন ৩-৪ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কোন প্রাইমারি স্কুল না থাকায় চা শ্রমিকের শিশু সন্তানরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল।

২০১২ সালে চা বাগান পঞ্চায়েত ও অভিভাবকদের দাবীর মুখে চা বাগানের খেলার মাঠের দক্ষিণ পাশের নিচু ভুমিতে একটি প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন জানান, তিনি ব্যক্তিগত ৩-৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ও সরকারি অনুদানের ৬৬ হাজার টাকায় নিচু জায়গা ভরাট করে ইটের গাঁথুনির টিনসেট ঘর তৈরি করে দেন। বাগান পঞ্চায়েত ও শিক্ষার্থী অভিভাবকরা তাকে স্কুল কমিটির সভাপতি মনোনিত করেন। তিনি ৪ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যান।

সংশ্লিষ্টদের দাবীর মুখে স্কুলের সাইনবোর্ডে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে তার নাম লিখেন। প্রায় ১০ বছর ধরে যথারীতি পাঠদান চলছিল। কিন্তু ৮ মাস আগে হঠাৎ বাগান কর্তৃপক্ষ স্কুল ভবন থেকে সাইনবোর্ড নামিয়ে পাঠদান বন্ধ করে দেয়। এতে অধ্যয়নরত দেড়শতাধিক শিক্ষার্থীর পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। স্কুল বন্ধ থাকায় ইতিমধ্যে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে।

তিনি অভিযোগ করেন, বাগান কর্তৃপক্ষ স্কুল বন্ধ করে দিয়ে অনেক শিক্ষার্থীকে চা পাতা চয়নের কাজে নিয়োজিত করেছে।

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে স্কুলের শ্রেণিকক্ষ ফাঁকা এবং মাঠে গরু-ছাগল চরতে দেখা যায়। প্রধান শিক্ষক সুমন ঘোষ জানান, প্রায় ৮ মাস আগে স্কুলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রায় ১০ বছর ধরে তারা চার শিক্ষক মিলে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সভাপতি হিসেবে ইউপি চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন কয়েক মাস তাদের সম্মানী দিলেও পরে তিনি বা অন্য কেউ খোঁজখবর নেননি। তারা কিভাবে পড়াবেন, কি খাবেন এ নিয়ে কারো কোন চিন্তা নেই। এরপরও তারা পাঠদান চালিয়ে যান।

তিনি আরও জানান, জানুয়ারী মাসে প্রত্যেক ক্লাসেই ছাত্র ভর্তি ছিল। কিন্ত হঠাৎ স্কুল বন্ধ করে দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগে পড়েছে। স্কুলের জরুরি নথিপত্র ও খাতাপত্র বাড়িতে নিয়ে রেখেছেন প্রধান শিক্ষক।

চা বাগান ব্যবস্থাপক মাহমুদুল হাসান মাছুম জানান, বাগান কর্তৃপক্ষ স্কুলটি বন্ধ করেনি। মালিকপক্ষ বাগানের ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত স্কুলের সাইনবোর্ডে ইউপি চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিনের নাম দেখে তা অপসারণ করতে বলায় তিনি তা নামিয়ে ফেলেন। এ স্কুলের কোন শিক্ষার্থীকেই বাগানের কাজে নিয়োজিত করা হয়নি। এ অভিযোগটি সম্পুর্ণ মিথ্যা। মঙ্গলবার শিক্ষকদের ডেকে পুনরায় পাঠদান শুরু করতে বলা হয়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মীর আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে এ স্কুলটিতে প্রধান শিক্ষকের চাহিদা অনুযায়ী প্রত্যেক ক্লাসের শিক্ষার্থীকে সরকারী বই দেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সকল তথ্যও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রেরণ করা হয়। চলমান স্কুল বন্ধের কোন সুযোগ নেই। খোঁজ নিয়ে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।

Back to top button