কমলগঞ্জে বিয়েতে রাজি না হওয়ায় কিশোরীকে কুপিয়ে হত্যা

মনিরুল ইসলামঃ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের সদর ইউনিয়নের ছতিয়া গ্রামে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ৮ জন আহত হয়েছেন। ঈদের আগের দিন শনিবার(৯ জুলাই) বিকাল ৩ টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশ এ ঘটনায় হামলাকারী ২ জনকে আটক করেছে।
হামলার ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (১২ জুলাই) ভোরে আয়েশার মৃত্যু হয়। নিহত কিশোরী আয়েশা বেগম(১৮) একই গ্রামের মৃত আজাদ মিয়ার মেয়ে।
আয়েশার মৃত্যুর খবর তার গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ছতিয়া গ্রামে এসে পৌছালে চারদিকে শোকের ছায়া নেমে আসে। এরই মধ্যে নিহতের বাড়িতে ঝড়ো হয়েছেন এলাকার হাজার হাজার মানুষ। অনেকেই হৃদয় বিদারক এ মৃত্যুর ঘটনায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
কমলগঞ্জ থানায় দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা যায়, ছতিয়া গ্রামের মৃত আজাদ মিয়ার পরিবার শনিবার সকালে কোরবানির জন্য একটি গরু ক্রয় করে এনে বাড়ির আঙ্গিনায় ঘাস খাওয়ার জন্য বেঁধে রাখেন। বিকালে পাশের বাড়ির জহুর মিয়ার ছেলে সিরাজ মিয়া ঐ গরুটি তাদের খেতের ধান খেয়েছে বলে অভিযোগ করে গরুটি তাদের বাড়িতে নিয়ে বেঁধে রাখেন। এ নিয়ে উভয় পরিবার সদস্যদের মাঝে কথা কাটাকাটি হলে বিকাল ৩টার দিকে সিরাজ মিয়া গংরা মৃত আজাদ মিয়ার পরিবারের উপর দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। হামলায় ঘটনায় ৮জন আহত হন।
আহতরা হলেন- আয়েশা বেগম(১৮), কনিজা বেগম(৫৫), নশাদ মিয়া(৫৫), জুবেদা আক্তার(৪৫), ছালেহা বেগম(৪০), হারিস মিয়া(৩৫), বদরুল ইসলাম সোহাগ(২৩) ও সুমন মিয়া ওরফে সালাউদ্দিন (২৫)। এ হামলায় কনিজা বেগম, আয়েশা বেগম, জুবেদা আক্তার, ছালেয়া বেগম গুরুতরভাবে আহত হন। গ্রামবাসী আহত নারীদের উদ্ধার করে প্রথমে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তাদের পরে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তবে আয়েশা বেগমের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাতেই তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোরে আয়েশার মৃত্যু হয়।
আয়েশার পরিবারের সদস্যরা জানান, বুধবার (১৩ জুলাই) একই গ্রামের সালাউদ্দিন সুমনের সাথে আয়েশার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। সেই মতে প্রায় সবধরণের প্রস্তুতিও তারা সম্পন্ন করেছিলেন। হামলাকারী সিরাজ মিয়া আয়েশাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। আয়েশা সিরাজ মিয়ার ফুফাতো বোন হন। আয়েশার পরিবার আত্বীয়ের সাথে আয়েশার বিয়ে দিবেন না বলে সিরাজের পরিবারকে জানান। এতে ক্ষুব্ধ হয়েই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তারা জানান। হামলায় আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করায় আয়েশার আর বিয়ের পিড়িতে বসা হলো না।
সোমবার এ হামলার ঘটনায় ৭জনকে আসামী করে কমলগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। কমলগঞ্জ থানা পুলিশ হামলাকারী সিরাজ মিয়া ও সামাদ মিয়াকে সোমবার আটক করেছে। মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক বিজয় প্রসাদ রায় হামলা ও কিশোরীর মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ মামলায় সিরাজ ও সামাদ নামে ২ জনকে আটক করে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।