জুড়ীতে জলে ভাসছে মানুষ, নেই বিদ্যুৎ, চরম দুর্ভোগ

মনিরুল ইসলামঃ মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলায় ক্রমশ বেড়েই চলছে বন্যার পানি। পাহাড়ি ঢল, অতি বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে পুরো উপজেলা এখন পানিতে থৈথৈ। বন্যার পানিতে উপজেলার প্রায় অর্ধ লক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এদিকে বন্যার পানিতে উপজেলার বিদ্যুৎ সাব স্টেশন পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গত দিন ধরে পুরো উপজেলার মানুষ অন্ধকারে রয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় পুরো উপজেলায় শুনসান নিরবতা বিরাজ করছে।। চার্জ না থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে মোবাইল ফোন। ফলে বন্যা আক্রান্ত মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। বিদুৎ না থাকায় মোমবাতি জ্বালিয়ে কোনমতে রাত কাটাচ্ছেন বানভাসী মানুষ। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইতিমধ্যে মোমবাতির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে অধিক মুনাফা লাভের আশায়। তবে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে যাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করতে না পারেন সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
এ ছাড়া উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের সাথে উপজেলা সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি ইউনিয়নে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও বানভাসী মানুষদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রমুখী করা যাচ্ছে না। ভানবাসী মানুষ ঘরের ভিতর বাঁশের মাচা পেতে থাকার পাশাপাশি উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে সরকারি ভাবে শুকনো খাবারের পাশাপাশি রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে করে আশ্রয়কেন্দ্রে না আসা হাজার হাজার বানভাসী মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে।
সরজমিনে বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে দেখা যায় খাবার, সুপেয় পানি ও পয়োনিষ্কাশন জন্য বন্যার্ত মানুষের মাঝে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। এছাড়া বন্যায় গবাদিপশু নিয়ে মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। মানুষ ইতিমধ্যে রেললাইন,সড়কের উঁচু জায়গা সহ ব্রীজে গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
বন্যার পানিতে নিরাপদ পানির উৎস নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগ এলাকায় গো-খাদ্যের সংকটের পাশাপাশি গবাদিপশু নিয়ে খামারীরা পড়েছেন চরম সংকটে। বন্যার পানিতে উপজেলার অধিকাংশ মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মৎস্যজীবীদের মাথায় পড়েছে হাত। এছাড়াও বন্যার পানিতে উপজেলার কৃষিজমি তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষকরা।
বেলাগাঁও সামছুল ওলুম মাদ্রাসার অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে খোদেজা বেগম (৫৫) সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, বন্যার পানিতে ঘরে থাকা মালামাল ফেলে জীবন বাঁচাতে ঘর থেকে বের হয়েছি। কোন উপায় না পেয়ে পরিবারের ৫ সদস্যদের নিয়ে এ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি। তবে এখনও কোন সহায়তা না পেয়ে দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছি। শুধু বাজার থেকে মুড়ি কিনে এনে খেয়ে কোনো মতে বেঁচে আছি।
বন্যার পানিতে ঘরবাড়ী তলিয়ে যাওয়া সালেহা বেগম (৬০) পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তিনি বলেন, কেউ খোঁজখবর নিতে আসছে না।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যায় উপজেলার ৩২২০ হেক্টর আউশ ধান পানিতে ভেসে গেছে। এছাড়া কৃষকের ধানের বীজতলা ও সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
জায়ফরনগর ইউনিয়নের বেলাগাঁও ও নয়াগ্রাম ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল কাশেম ও মনিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে লাশ দাফনেরও কোনো শুকনো মাটি নেই। বন্যায় আমাদের ওয়ার্ডে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। খাবার সঙ্কটে চারদিকে মানুষের মধ্যে হাহাকার চলছে। আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি বন্যার্ত সকল মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া এখন খুব জরুরী।
পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আনফর আলী বলেন, আমার ইউনিয়নের বানভাসী মানুষের মাঝে ইতিমধ্যে শুকানো খাবারের পাশাপাশি রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সোনিয়া সুলতানা বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার পাশাপাশি রান্না করা খাবার বিতরণ শুরু করা হয়েছে।