অপরাধ চিত্র

কোটি টাকা আত্মসাৎ নিয়ে তিনি বললেন, ‘মাশআল্লাহ, আল্লাহ ভালো জানেন’

নারায়ণগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানের পর বেরিয়ে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযানের পর থেকে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শরিফুল ইসলামকে খুঁজে পাচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা। অভিযুক্ত এ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে।

নারায়ণগঞ্জে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ৪১৪ শিক্ষকের এমপিওর ফাইল প্রক্রিয়াকরণের নামে তিনি প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা শিক্ষা অফিসে অভিযান চালায়।

এরপর থেকে শিক্ষা কর্মকর্তাকে অফিস সময়ে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিদিন শিক্ষা কর্মকর্তার অফিসে শিক্ষকরা ফাইল প্রক্রিয়া করার জন্য ঘুরাঘুরি করছেন কিন্তু তাকে অফিসে না পেয়ে ফাইলে স্বাক্ষর করাতে পারছেন না।

জানা গেছে, সরকারের শিক্ষা বিভাগের অধীনে এনটিআরসিএর মাধ্যমে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্কুলে ৪১৪ শিক্ষক সরাসরি সরকারি বিধি মোতাবেক এমপিও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে জেলার ১৪৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। এরপর যোগদানকৃত শিক্ষকরা সরকাীর নিয়ম অনুযায়ী বেতনভাতা প্রাপ্তির জন্য জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে মাধ্যমিক ওউচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করতে হয়। এ আবেদনটি প্রক্রিয়া করার জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রত্যেক শিক্ষক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রথম পর্যায়ে ১৫ হাজার এবং পরবতীতে আরো ৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। আড়াইহাজার উপজেলার একটি স্কুলে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক সালেহা আকতার জানান, তিনি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পিয়ন

আবুল হোসেনের মাধ্যমে দুই দফায় ২০ হাজার টাকা দেওয়ার পর তার ফাইল প্রসেস করা হয়েছে।

তিনি জানান, অনেককেই প্রতিদিন টাকা নিয়ে পিয়ন আবুলের কাছে বসে থাকতে হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিয়ন আবুল ছয় বছর আগে অবসর গ্রহণের পর এখনো শিক্ষা অফিসে বহাল আছেন। তিনি এসব শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে শরিফুল ইসলামকে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

শহরের গণবিদ্যা নিকেতন হাই স্কুলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক জানান, গত এক বছর ধরে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি না থাকায় শরীফুল ইসলাম সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি স্কুলে না আসলেও বেতনের চেক সই করতে প্রতিজনকে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে দিতে হয়।

ওই শিক্ষক জানান, করোনাকালীন বিভিন্ন স্কুলে ম্যানেজিং কমিটি না হওয়ায় এরকম ১৭টি স্কুলে তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিটি স্কুলে শিক্ষকদের কাছ থেকে নিয়মিত অর্থ আদায় করছেন। তিনি কাজ না বুঝলেও, টাকা ঠিকই বুঝেন। টাকা ছাড়া কিছুই করেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম নিজেই নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের এমপিও ফাইল প্রসেস করে শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠাচ্ছেন।

মঙ্গলবার (২৪ মে) বিকেলে কথা হয় আলোচিত এ শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে। জেলার ৪১৪ শিক্ষকের কাছ থেকে কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নারায়ণগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার শরিফুল ইসলাম শুরুতেই বলেন, ‘মাশআল্লাহ’।

এরপর তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। আল্লাহই ভালো জানেন। যারা লিখছে তারা কীভাবে লিখছেন তারাই ভালো বলতে পারবেন। আমি অবাক হচ্ছি। এ বিষয়ে আমার বক্তব্য হচ্ছে, পুরো বিষয়টি মিথ্যা। একজন শিক্ষ অফিসার তার রুটিন ওয়ার্কের বাইরে কাজ করতে পারেন না। যারা এ সমস্ত কথা বলছেন, তারাই ভালো বলতে পারবেন।

তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন কোন না কোন উপজেলায় তাকে তদন্তে যেতে হয় সে কারণে সাধারণত রাতে তিনি অফিস করেন।

Back to top button