আগামী সোমবারের (১৬ মে) মধ্যে জনপ্রতি সাড়ে আট লাখ টাকা করে দিতে না পারলে ইতালির উদ্দেশে রওনা দেওয়া নয় অভিবাসনপ্রত্যাশীকে হত্যা করে ভূমধ্যসাগরে লাশ ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে মানবপাচারকারী দালাল চক্র। এর আগে গত বুধবার তাদের জিম্মি করেছে চক্রটি। আটক ব্যক্তিদের কয়েকজন তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছেন।
জিম্মি থাকা নয়জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন—হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমবাগ গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রাইমারি শিক্ষক আব্দুল মুকিত খানের ছেলে মো. সাজানুর রহমান (৩৫), একই গ্রামের সজলু মিয়ার ছেলে আফজল, সেকুল মিয়ার ছেলে নাসির (২০), হবিগঞ্জ শহরের নোয়াবাদ এলাকার মৃত সফর আলীর ছেলে উজ্জল (২৭)। বাকিদের নাম-ঠিকানা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
জিম্মি থাকা মো. সাজানুর রহমানের ভাই স্কুল শিক্ষক মো. অছিউর রহমান জানান, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সাজানুর ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। মৌলভীবাজারের মর্তুজা নামে এক দালালের মাধ্যমে সে বেনগাজি পৌঁছান। পরে ছাবু মিয়া নামে আরেক দালালের কাছে সাজানুরকে বিক্রি করে দেয়। সেখানে কোস্টগার্ডে রহাতে ধরা পড়লে তিন লাখ টাকায় মুক্তি পান।
পরবর্তী সময়ে দালাল তৈমুর মিয়া ইতালি পাঠানোর দায়িত্ব নেন। তৈমুরের বাড়ি নবীগঞ্জের ইমামবাড়িতে। তার পরিবার বর্তমানে হবিগঞ্জ শহরের নোয়াবাদ এলাকায় বসবাস করছে বলে জানা গেছে। তৈমুর বর্তমানে ত্রিপলি অবস্থান করছেন।
এদিকে গত বুধবার থেকে প্রত্যেক জিম্মি পরিবারকে সোমবারের মধ্যে সাড়ে আট লাখ টাকা করে দেওয়ার জন্য দাবি করছে চক্রটি। অন্যথায় তাদের মেরে ভূমধ্যসাগরে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।
শিক্ষক অছিউর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, তার ভাই সাজানুর পাঁচ মাস বয়সী এক কন্যার পিতা। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ফেরানোর জন্যই তিনি বিদেশের পথে পা বাড়ান।
‘দালালের হুমকি পেয়ে আমার পরিবারের সকলই খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে কান্নাকাটি করছেন। এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দালালেরা হাতিয়ে নিয়েছে। একদিকে ভাইয়ের জীবন অন্যদিকে দালালদের দাবি পূরণ কীভাবে করব এ নিয়ে চিন্তা করছি।’ বলেন অছিউর রহমান।
জিম্মি থাকা মো. নাসির মিয়ার বাবা সেকুল মিয়া বিলাপ করে বলেন, ‘আমি নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। ইতোমধ্যে জমিজমা বিক্রি করে নয় লাখ টাকা তৈমুর দালালকে দিয়েছি। এখন আরও সাড়ে আট লাখ টাকা না দিলে আমার বুকের ধনকে ওরা মেরে ফেলবে। অনেক নির্যাতন চালাচ্ছে ওর ওপর। দয়া করে আমার ছেলেটাকে বাঁচান।’
সজলু মিয়ার বাবা আফজল মিয়া বলেন, ‘পাঁচ মাসেও দালালেরা তাকে ইতালি পৌঁছাতে পারেনি। ইতোমধ্যে জমিজমা বিক্রি করে ১৬ লাখ টাকা দালালদের দেওয়া হয়েছে।’
আরেক জিম্মি উজ্জ্বলের শ্বশুর মো. ফারুক মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ধার দেনা করে আমাদের না জানিয়েই উজ্জ্বল বিদেশ চলে গিয়েছিল। আমার মেয়ের একটি বাচ্চা সন্তান রয়েছে। ওর কোনো ক্ষতি হয়ে গেলে মেয়ে ও নাতিদের ভবিষ্যত কী হবে?
বন্দী অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন, বাংলাদেশি দালালদের হাতেই আটক রয়েছেন তাদের স্বজনরা। বর্তমানে যে চক্রটি তাদের জিম্মি করেছে, তাদের অন্যতম হোতা হলেন হবিগঞ্জের তৈমুর মিয়া।
এদিকে দালাল তৈমুরের স্ত্রীর সঙ্গে জিম্মিদের পরিবার যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তৈমুরের সঙ্গে বেশ কিছু দিন ধরে তার যোগাযোগ নেই।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, বিষয়টি আমার নলেজে নেই। যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে তাদেরকে সহযোগিতা করা দরকার। আমি বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।
