সিলেট

বালাগঞ্জে উপড়ে ফেলা হলো কৃষকের চোখ, আটক ৩

টাইমস ডেস্কঃ সিলেটের বালাগঞ্জে উপড়ে ফেলা হলো কৃষক হামিদ মিয়ার দু’টি চোখ। একটি চোখ উপড়ে নিয়েও গেছে। এছাড়া ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা থেকে আলগা করে দেয়া হয়েছে খুলি। শনিবারে এমন নির্মম ঘটনাটি ঘটে উপজেলার খুজগিপুর গ্রামে।

কৃষক হামিদ এখন ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে জীবন নিয়ে লড়াই করছেন। ইতোমধ্যে পুলিশ অভিযুক্ত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে।

জানা যায়, কৃষক হামিদ মিয়া ও তার চাচাত ভাই আব্দুল মতিনের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ চলছে একই গ্রামের প্রভাবশালী লেবু মিয়ার। ফলে দুই পরিবারের মধ্যে কয়েক বছর ধরেই বিরোধ চলছিল। কয়েক দিন আগে লেবু মিয়া বালাগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এতে অভিযুক্ত করেন আব্দুল মতিনের পরিবারের লোকজনকে। জিডি করার পর বালাগঞ্জ থানা পুলিশের কয়েকটি টিম একসাথে এলাকায় যায়। তারা গিয়ে আসামি গ্রেফতারের নামে এলাকায় ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে। এতে করে আব্দুল মতিনের পরিবারের অনেক সদস্য পুলিশি ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। এই অবস্থায় ভয়ে ভয়ে ছিলেন আব্দুল মতিনের ভাই ও চাচাত ভাইরা।

শনিবার দুপুরের দিকে আব্দুল মতিনের চাচাত ভাই হামিদ মিয়া নিজের জমি থেকে ধান কেটে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির পুকুর পাড়ে আসা মাত্র আব্দুল লেবু মিয়ার লোকজন তার উপর হামলা চালায় বলে জানা গেছে।

গুরুতর আহত হামিদ মিয়া ঘটনার পরপরই জানিয়েছিলেন, তিনি আসা মাত্র ঝোপ থেকে বের হয়ে লেবু মিয়ার লোকজন তার ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে তিনি মাটিতে পড়ে গেলে তার উপর চড়ে বসে আব্দুল কুদ্দুসসহ কয়েকজন। একপর্যায়ে কুদ্দুস কোমর থেকে ধারালো অস্ত্র বের করে তার মাথার খুলি আলগা করে ফেলে এবং ছোটো ধারালো ছুরি দিয়ে দুই চোখ উপড়ে ফেলে। এর মধ্যে উপড়ে ফেলার পর বাম চোখ তারা নিয়ে গেছে। আর ডান চোখ উপড়ানো অবস্থায় চোখের কাছে ঝুলন্ত ছিল। হামিদের চিৎকার শুনে ভাই আব্দুর রকিব, স্ত্রীসহ স্বজনরা ছুটে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়।

ঘটনার পরপরই গুরুতর আহত হামিদকে প্রথমে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় রাতে বিশেষ ব্যবস্থায় ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকলেও হামিদের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। তারা আপাতত তার চোখ নিয়ে নয়, জীবন বাঁচাতে লড়াই চালাচ্ছেন।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাথার খুলি আলাদা করার কারণে তার মগজের অংশ বের হয়ে আসে। প্রাথমিকভাবে তারা খুলি অংশ সেলাই করেছেন। ওই অংশ দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

হামলায় আহতরা হচ্ছেন জাকির আহমদ, একই গ্রামের জুনেদ আহমদ ও জিলু মিয়ার পুত্র শামসুল মুক্তাদির মিজান।

দু’চোখ হারানো আব্দুল হামিদের ছোট ভাই আব্দুর রকিব জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন থেকে একই গ্রামের আব্দুল বারী খাজুরের ছেলে সন্ত্রাসী আসুক মিয়ার নেতৃত্বে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে। এলাকার নিরীহ লোকজন তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ।

তিনি বলেন, ঠিক একইভাবে শনিবার বেলা ২টার দিকে আসুক মিয়ার নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জন সন্ত্রাসী নিরীহ আব্দুল হামিদসহ তার স্বজনদের ওপর তাদের বসতবাড়িতে এসে হামলা চালায়। এতে দুই সহোদরসহ চারজন গুরুতর আহত হন। আহতদের মধ্যে আব্দুল হামিদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।

বালাগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনার নির্মমতা বুঝতে পেরে হাসপাতালে থাকা আব্দুল কুদ্দুসকে গ্রেফতার করেছে। আশুক মিয়াকে আটক করলেও উন্নত চিকিৎসার দোহাই দিয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেছে।

গ্রামের লোকজন জানিয়েছেন, আব্দুল মতিনের ভাই ও চাচাতো ভাইরা মসজিদে যেতে পারেননি। গোটা রমজান মাসই লেবু মিয়ার অংশের লোকজন সশস্ত্র মহড়া দিয়েছে। একটি মামলায় আসামিরা জামিন নিয়ে গিয়েই হামলা চালিয়ে হামিদকে গুরুতর আহত করেছে।

বালাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রমা প্রসাদ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে ইমরান ও মামুন নামের দুইজনকে গ্রেফতার করেন। ওসমানী হাসপাতালে গ্রেফতার হয়েছে আরেকজন। এ ঘটনায় মামলা গ্রহণের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে বলে জানান তিনি।

Back to top button