বড়লেখা

এই শহরের মানুষ মৃত্যুকে ভয় পায় না !

আশফাক জুনেদ,বড়লেখা:: দেশে করোনার সংক্রমন ব্যপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন করোনায় মৃৃত্যু ও সংক্রমনের রেকর্ড গড়ছে। এমন অবস্থায় করোনার লাগাম টেনে ধরতে দেশে চলছে সরকার ঘোষিত সর্বাত্মক কঠোর লকডাউন। কিন্তু সেই লকডাউন মানছে ক’জন! লকডাউনকে উপেক্ষা করে শত শত মানুষ সড়কে বাজারে ঘোরাফেরা করছে। মৌলভীবাজারের বড়লেখায়ও একই চিত্র। এই উপজেলার মানুষ করোনাকে যেনো পাত্তাই দিচ্ছে না। মৃত্যু ভয় যেনো তাদেন কাবু করতে পারছে না। সড়ক, শপিং মল, কাঁচাবাজারে যেভাবে মানুষের ভিড় আর স্বাস্থ্যবিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বেপেরোয়া চলাফেরা করছে এতে ধারণা করা যায় এই শহরের মানুষের মৃত্যুর ভয় নেই।

সরেজমিন বড়লেখা পৌর শহর সহ আশপাশের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, অবাধে সিএনজি, প্রাইভেট কার, রিক্সা, মোটরসাইকেলে করে মানুষ কোনরকম বাধা ছাড়াই পৌর শহরে ঢুকছে। একই সিএনজিতে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। পৌর শহরে চলাফেরা করা বেশিরভাগ মানুষের মুখে নেই মাস্ক। মাছবাজার, কাঁচাবাজারেরর অবস্থা আরও ভয়াবহ। কোন রকম স্বাস্থ্যবিধিরও তোয়াক্কা না করে মানুষ এক জায়গায় জড়ো হয়ে কেনাকাটা করছে।

লকডাউনে সড়কে যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রয়োজনের তাগিদে বের হওয়া মানুষ সিএনজি ও রিকশায় যাতায়াত করছেন। কোথাও কোথাও পুলিশের চেকপোস্টে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের। আবার কোথাও স্বাভাবিকভাবেই যাতায়াত করা যাচ্ছে। বড়লেখার পৌর শহরে অনেকটা যানজট দেখা গেছে। পুরো সড়কজুড়েই রিকশা আর সিএনজির আধিপত্য লক্ষ্য করা গেছে। আর সড়কে মানুষের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো।

এদিকে লকডাউনে পৌর শহরের বেশ কয়েকটি বিপনী দোকানও খোলা রাখতে দেখা গেছে। এসব দোকান থেকে মানুষ কেনাকাটা করছে।এছাড়া পৌরশহরের অনেক রেস্টুরেন্টের সামনে ইফতার সামগ্রী কিনতেও ভিড় দেখা গেছে। এসময় সিংহভাগ মানুষের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। আবার অনেকের সাথে মাস্ক থাকলেও কেউ পরেছেন তুথনিতে কেউবা রেখেছেন পকেটে।

তুথনিতে মাস্ক রাখা জুবের আহমদ নামের এক যুবক বলেন, আমার মাস্ক সবসময় মুখে থাকে। এখন গরম লাগছে তাই নামিয়ে রেখেছি।লকডাউনে বাজারে কেনো এসেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, জুরুরি কিছু কাজ ছিলো তাই বাজারে আসতে হয়েছে। এখন কাজ শেষ চলে যাবো। এসময় আসার সময় কোন রকম বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান কোন রকম বাধার সম্মুখীন হননি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্ম সুত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৫ এপ্রিল উপজেলার কাশেমনগর গ্রামের এক ব্যক্তির প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। প্রথম থেকে এ পর্যন্ত উপসর্গ থাকায় বড়লেখায় ৮৪০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ১৬১ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১ জন মারা গেছেন।

এরপর দেশে করোনার সংক্রমন কিছুটা কমে আসলে এ উপজেলার মানুষের জীবনযাত্রাও অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে যায়। করোনার আতংক কেটে যায় ফলে অনেকের উপসর্গ দেখা দিলেও কেউ নমুনা পরিক্ষা করাননি। এতে উপজেলায় নতুন করে কারো করোনা শনাক্ত হয়নি।

এদিকে দেশে করোনার সংক্রমন বেড়ে গেলে নতুন করে বড়লেখায়ও করোনা আক্রান্ত রোগী বাড়ার আশংকা করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।গত দুই দিনে বড়লেখা হাসপাতালে ৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করে সিলেটে প্রেরণ করা হয়েছে। দেশের এই পরিস্থিতিতে মানুষ যেভাবে চলাফেরা করছে তাথে বড়লেখায় করোরা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।তারা করোনা থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প দেখছেন না।

এ বিষয়ে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রতœদ্বীপ বিশ্বাস বলেন, দেশে করোনার সংক্রমন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন অবস্থায় মানুষজন যে হারে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে ঘোরাফেরা করছে এতে যেকোন সময় যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন। বাজারে মানুষের উপচে পড়া ভিড়, বেশির ভাগের মুখে নেই মাস্ক। এতে করোনার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। বড়লেখায় করোনা আক্রান্ত রেগীর সংখ্যা কম। এর মানে এই নয় আসলেই বড়লেখা করোনা মুক্ত। মানুষজন নমুনা পরিক্ষা করাচ্ছে না তাই শনাক্ত হচ্ছেন না। আমি মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গির হোসেন সর্দার বলেন, লকডাউন বাস্তবায়নে বড়লেখায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। বড়লেখায় চান্দগ্রামসহ দুইটি স্থানে পুলিশি চেকপোস্ট রয়েছে। বাহিরের জেলার মানুষ যাতে বড়লেখায় ঢুকতে না পারে সেজন্য পুলিশ কাজ করছে। এছাড়া অতিপ্রয়োজনে যারা বাহিরে আসছে তারা যাতে মাস্ক পরিধান করে আসে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করছে পুলিশ।

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান বলেন, বড়লেখায় সর্বাত্মক লকডাউনে মানুষকে ঘরে আটকে রাখা যাচ্ছে না। যে হারে মানুষজন চলাফেরা করছে এতে নিজেদের বিপদ নিজেরা ডেকে আনছে। লকডাউন কার্যকরে আমরা প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করছি। মানুষকে জরিমানা করছি। মানুষকে ঘরে থাকার অনুরোধ করছি।

Back to top button